ল্যাব ইনচার্জ, চিটাগং ভেটেরিনারি ল্যাব
নাহার এগ্রো
শীতে গবাদিপশুর আবহাওয়াজনিত কারণে নানান রোগ দেখা দিতে পারে এবং এর জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে গবাদিপশুর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি হতে পারে। শীতে গবাদিপশুর যে রোগগুলি সাধারণত দেখা দেয় সেগুলি হলো ক্ষুরারোগ, গলাফুলা, তড়কা, বাদলা, ফ্যাসিওলিওসিস, নিউমোনিয়া ইত্যাদি। শীত আসার আগেই ক্ষুরা, বাদলা, তড়কা, গলাফোলা ইত্যাদি রোগের প্রতিষেধক বা টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে খামারের গবাদিপশুকে।
নিচে এই ব্যপারে কিছু দিকনির্দেশনা দেয়া হল।
খাদ্যাভ্যাস: শীতকালে প্রাণীর শরীরে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ফলে দুধের উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বাড়তি উৎপাদনের জন্য বাড়তি শক্তি প্রয়োজন। তাই শীতকালে গরুকে অধিক খাবার দেয়া জরুরি। তবে শীতকালে কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের প্রবণতা দেখা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্ষা করতে অধিক আঁশযুক্ত খাবার যেমন ঘাস, সাইলেজ ও উচ্চমানের খড় দেয়া আবশ্যক। শীতকালে, গরুকে গাজর, আলু, কুমড়া, শালগম ইত্যাদি শাকসবজি কাঁচা খাওয়ানো যেতে পারে।
পানি: শরীরবৃত্তীয় কাজে পানি কম দরকার হওয়ায় এবং অধিক ঠাণ্ডার কারণে শীতকালে সকল প্রাণী পানি পানের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য গরুকে ট্যাংকে সংরক্ষিত বাসি ও ঠাণ্ডা পানি পরিবেশন থেকে বিরত থাকতে হবে। গরুর জন্য বিশুদ্ধ ফ্রেশ হালকা গরম পানির ব্যবস্থা করতে হবে।
বাসস্থান: শীতকালে ঠাণ্ডা বাতাস যেন সরাসরি গরুর গায়ে না লাগে এইজন্য ঠাণ্ডা বাতাস প্রবেশের রাস্তাগুলো চটের বস্তা, পলিথিন বা অন্য কোন উপায়ে বন্ধ করে দিতে হবে। ঠাণ্ডা বাতাসে গরু নিউমোনিয়াসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। প্রয়োজনে গরুকে পুরানো কম্বল বা চটের বস্তা জাতীয় জিনিস দিয়ে রাতে জড়িয়ে রাখতে হবে।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: ঠাণ্ডায় গরুর শেডে যাতে পানি না জমে অথবা গরুর প্রস্রাব জমা না থাকে এবং ফ্লোর যেন অধিক শুষ্ক থাকে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। দরকার হলে ফ্লোর ম্যাট ব্যবহার করতে হবে। যদি আপনি আপনার গবাদিপশুকে গোছল করান তাহলে তাদের কিছুক্ষণ রোদে বেঁধে রাখবেন। গা শুকানোর পর গোয়ালঘরে ঢুকাবেন। বেশী শীতে প্রতিদিন গোছল না করালেও চলবে, শুধু শরীরটা ভালো করে পরিষ্কার করবেন। প্রতিদিন সকাল বিকালে আপনার খামারের প্রতিটি গরুর ৪ পা ও পায়ের তলদেশে এবং খামারের আশেপাশে জীবনুনাশক স্প্রে ব্যবহার করুন। জীবাণুনাশক GPC 8 অথবা FAM 30 ব্যবহার করতে পারেন।
রোগ ব্যাধি: শীতকালে গরু নিউমোনিয়া, কাশিসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এই রোগের বিষয়ে বিশেষ সচেতন থাকতে হবে। শীতের আগেই কুয়াশা পরে, তাই খেয়াল রাখবেন যাতে কোনভাবেই গবাদিপশু কুয়াশায় না ভিজে। এতে করে ঠাণ্ডা লেগে জ্বর বা নিউমোনিয়া হয়ে যেতে পারে। ঠাণ্ডাজনিত কোনো সমস্যার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা করতে হবে। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাতের কাছে বিশুদ্ধ মধু এবং তুলসী গাছ রাখতে হবে। শীতে গবাদিপশুতে পাতা কৃমির আক্রমণ দেখা যায় এবং এ কারণে গবাদিপশুর ফ্যাসিওলিওসিস রোগ হয়ে থাকে। তাই গবাদিপশুকে কৃমিনাশক দিতে হবে।
বাছুরের যত্ন: ঠাণ্ডায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় নবজাতক বাছুর। যেহেতু বাছুরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তাই ঠাণ্ডাজনিত রোগের শিকারও সবচেয়ে বেশি হয়। তাই শীতকালে অবশ্যই বাছুরকে গরম কাপড় দিয়ে জড়িয়ে রাখতে হবে এবং গরম এবং শুষ্ক জায়গায় রাখতে হবে। কোনো প্রকার ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
শীতে আপনার বিশেষ যত্নই আপনার খামারকে শীতকালীন সমস্যা থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করবে। আর এজন্য আপনার সচেতনতা সবচেয়ে বেশি জরুরি।